আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
দুই বছর পর...
অনেক্ষন ধরে টু টুটুট টুটুট করে টেলিফোন বাজছে।
সৌম্য গভীর ঘুমে তখন।মনে হচ্ছিল বহু দুরের কোন শব্দ। ঘুমটা হালকা হতেই সে ভীষণ আলস্য ভরে লেপ থেকে হাতখানা কোন রকমে বের করে সাইড টেবিল হাতড়ে কর্ড-লেস ফোনখানা ধরে এক চোখ দিয়ে সরু সবুজ আলোর ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে উল্টা পাল্টা নম্বর দেখে বুঝল ওভার-সিজ কল।
ফোন রিসিভ করতেই টুট করে একটা শব্দ তারপরেই ববির উত্তেজিত কণ্ঠ; হ্যালো সৌম্য?
সৌম্য ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল; হ্যাঁ- কিরে ববি তুই এত সকালে!
-আরে শালা কতক্ষণ ধরে ট্রাই করতেছি তোরে- এখনো ঘুমচ্ছিস?
- হ্যাঁ, সবেতো সাতটা বাজে। নয়টার আগে আমি ঘুম থেকে উঠিনা।
- আছো দোস্ত আরামে। বাপের জমিদারি আছে- আরামসে ভোগ কইরা যাও।
- কি বলবি বল?
-কালকে তোর ভাবিরে নিয়ে বাংলাদেশে আসতেছি?
-ভাবি মানে কোন ভাবি?’ আমার মাথা তখনো কাজ করছে না
-হাঃ হাঃ ভাবিরে চিনলি না? তোমার পুরানো পাদরুগা( বান্ধবী)
আমার ঘুম উধাও।
-মানে এলিনা!! বিয়ে করলি কবে?
-করি নাই এখনো বন্ধু, করব। বাংলাদেশে এসে বিয়ে করব।
-কি কস- সত্যি?? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
- তোর কথা ফেলতে পারি দোস্ত। শোন কালকে সরাসরি ঢাকায় আমার বাসায় চলে আয়। আগামী সাতদিন তুই আমার বাসায় থাকবি। বিয়ে শাদীর সব ইন্তিজাম তোমারেই করতে হবে দোস্ত। আর এলিনার পরিচিত তুই ছাড়া তো কেউ নাই। তুই না থাকলে ও বোর ফিল করবে- রাশিয়ান ভাষায় কার সাথে কথা বলবে।
আমি হা হু করে ফোন রেখে দিলাম। বিশ্বাস ই হচ্ছে না ববির মত বাবনিক শেষ মেষ এলিনাকেই বিয়ে করছে। এরপরে বাংলাদেশে এনে। মানে পালটি খাওয়ার সম্ভাবনা কম।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পরদিন সকালেই গোছ গাছ করে আমার বাল্য ইয়ার সুমনকে সাথে নিয়ে বাবার দেয়া উপহার ঝকঝকে মার্ক টু গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। আসার পথে কুমিল্লা থেকে একগাদা মিষ্টি আর রসমালাই নিলাম।
ঢাকায় ঢুকে শাহবাগ থেকে দামী দামী ফুলের বেশ বড়সড় একটা তোড়া সাজিয়ে নিলাম। ববিদের বাড়ি মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে। একতলা পুরনো বাড়ি। তবে বাড়ি পুরনো হলেও বেশ আভিজাত্য আছে। আমি আগেও বেশ কয়েকবার আমি এ বাড়িতে এসেছি।
ওর মা বোন আর বড় ভাই আমাকে খুব আদর করে। বিশেষ করে ববির মা-তো আমাকে ছেলের মত ভালবাসে।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই ওর স্বল্প বয়েসী আত্মীয়স্বজন আর বাচ্চা কাচ্চার ভিড় জমে গেল! ভি ভি আই পি হিসেবে আমাকে বরণ করা হোল। সারা বাড়ি অলরেডি রঙ্গিন কাপড়, ফুল আর টুনি বাতি দিয়ে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে। বেশ একটা উৎসবের আয়োজন চারিদিকে।
ববি প্রায় দৌড়ে এসে চরম উৎফুল্ল হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল,-অনেক ধন্যবাদ দোস্ত, আমি খুব খুশী হইছি।
আমরা ড্রইং রুমে গিয়ে বসতেই- মিষ্টি আর ফল দিয়ে আপ্যায়ন।
ববির ছোট বোন এলিনাকে সাথে নিয়ে এ ঘরে প্রবেশ করতেই ঘরটা যেন আলোকিত হয়ে গেল। আমি দুদণ্ড ভাষা হারিয়ে নির্নিমেষে চেয়ে থাকলাম ওর দিকে। সুমন যেন ট্যারা হয়ে গেছে-খাওয়া ভুলে হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কোন রকম ঢোক গিলে কানের কাছে মুখ এনে বলল, দোস্ত পরীর মত এইরকম মালরে তুই ছাড়লি কেমনে??
-প্রিভেদ! ঝক ঝকে দাঁতগুলো বের করে সেই গা জ্বালানো হাসি দিয়ে এলিনা সন্মোধন করল আমাকে।
-প্রিভেদ। কেমন আছ?
- ইয়া খারাশ-শো( আমি ভাল-লো, একটু শ্লেষ মিশ্রিত), তি কাক( তুমি কেমন)?
- ভোত এতা মোই দ্রুগ( সুমন। সুমনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। সুমন কি ভাষায় কি বলবে খুঁজে না পেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
- হালো সুমন। হাউ আর ইউ( ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে এলিনা সুমনকে কুশল জিজ্ঞেস করল)?
রুম ভর্তি লোক। আবাল বৃদ্ধা বণিতা সব মিলিয়ে জনা বিশেক হবে। সবাই হা করে আমাদের কথোপকথন শুনছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমি কোন ভিনগ্রহের এলিয়েনের সাথে তাদের ভাষায় কথা বলছি।
উজ্জ্বল ত্বক ও দারুণ সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী এলিনার পাশে বাকি সবাইকে জীর্ণ ও রুগ্ন লাগছিল।ববির এক বোন ভীষণ ফর্সা হওয়া সত্ত্বেও তাকে আজ এলিনার পাশে রক্তশূন্য ফ্যাঁকাসে লাগছিল।
ববিকে ছোটরা বেশ ভয় পায়। আমাকে পেয়ে যেন হাতে চাঁদ পেল। কারো মামা, কারো কাকা, কেউবা ভাইয়া হিসেবে সন্মোধন করছে। এই দেড়-দিনের জমিয়ে রাখা অনেক প্রশ্ন আমার মাধ্যমে এলিনাকে করছে?
কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার আগে থেকেই জানা- আমি নিজে থেকেই দিচ্ছি। তবে খুব সাবধানে- আমার সাথে ওর সম্পর্কের কথা চাউর হয়ে গেলে চরম কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
অল্পক্ষণেই এ বাড়ির অন্দরমহলের যে কোন কামরায় অবাধ প্রবেশের অনুমতি পেয়ে গেলাম আমি। যেখানে এলিনা সেখানেই আমি। ববি আমাকে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে স্থানীয় আর গ্রাম থেকে আসা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেড়িয়েছে। আমি বেশ মজা করে কথা বলি নাকি সেজন্য শুধু দোভাষী নয় আড্ডা জমাতেও আমাকে লাগছে। কিশোরী বয়সী থেকে বৃদ্ধা সবার কাছেই একদিনে আমার আকাশছোঁয়া কদর বেড়ে গেল।
আমিও মজা পাচ্ছি বেশ – আমার পুরোপুরি স্মার্টনেস ঢেলে দিচ্ছি সবখানে। শুধু এলিনার সামনে গেলেই বুকের মধ্যে খচ করে কি যেন বেঁধে। প্রতিবারই একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করি...
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
~প্রথম খন্ড প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link